🔹 শিশুর বয়স অনুযায়ী প্রসাবের বিধান: হাদিসের আলোকে জানুন!

ইসলামে পবিত্রতা (তাহারাত) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে নামাজের জন্য। প্রস্রাব নাপাক হলেও ছোট শিশুদের পেশাবের ক্ষেত্রে ছেলেশিশু ও মেয়েশিশুর বিধান ভিন্ন। এই বিষয়ে একাধিক সহিহ হাদিস থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা পাওয়া যায়।

শিশুর পেশাব সংক্রান্ত বিধান নিয়ে অনেকের মনেই নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। বিশেষ করে, এটি পাক-নাপাক হওয়ার বিষয়টি নিয়ে অনেকে দ্বিধায় থাকেন। ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী, পেশাব নাপাক হলেও কিছু নির্দিষ্ট শর্তে তা পরিষ্কার করার পদ্ধতি ভিন্ন হয়ে থাকে। 

🔹 শিশুর বয়স অনুযায়ী পেশাবের বিধান হাদিসের আলোকে জানুন!

আজকের এই ইনফোটিতে আমরা শিশুর বয়স অনুযায়ী পেশাবের বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

🕌 ছোট শিশুর পেশাব: নাপাক নাকি পবিত্র?

ইসলামের দৃষ্টিতে প্রস্রাব নাপাক। নবজাতক শিশু হোক বা বয়স্ক ব্যক্তি—সবার ক্ষেত্রেই প্রস্রাব নাপাক বলে গণ্য হয়। তবে, বিশেষ ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়ে শিশুর পেশাবের বিধানে কিছু ভিন্নতা রয়েছে।

হাদিসে এসেছে—

عَنْ عَائِشَةَ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ أَنَّهَا قَالَتْ أُتِيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِصَبِيٍّ فَبَالَ عَلَى ثَوْبِهِ فَدَعَا بِمَاءٍ فَأَتْبَعَهُ إِيَّاهُ

অর্থ: হযরত আয়েশা (রাযি.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে একটি শিশুকে আনা হলো। শিশুটি তাঁর কাপড়ে পেশাব করে দিল। তিনি পানি আনালেন এবং তা কাপড়ের উপর ছিটিয়ে দিলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ২২২)

🔴 নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত হাদিস অনুযায়ী, দুগ্ধপোষ্য ছেলে শিশুর পেশাবে পানি ছিটানো যথেষ্ট, তবে কন্যা শিশুর পেশাব ধুয়ে ফেলা আবশ্যক।

📜 হাদিস:
عَنْ عَلِيٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: "بَوْلُ الْغُلَامِ يُرَشُّ عَلَيْهِ، وَبَوْلُ الْجَارِيَةِ يُغْسَلُ"
(رواه أبو داود، الترمذي، ابن ماجه، وصححه الألباني)

🔹 অর্থ:
আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, "ছেলে শিশুর পেশাবে পানি ছিটানো হবে, আর মেয়ে শিশুর পেশাব ধুয়ে ফেলা হবে।"

📖 সহিহ সূত্র:

  • সহিহ ইবনে মাজাহ (৫২৫)
  • তিরমিজি (৬১০)
  • আবু দাউদ (৩৭৫)
  • সহিহ বুখারি ও মুসলিমে অনুরূপ হাদিস রয়েছে

🔍 ব্যাখ্যা:
🔹 ইসলামী ফিকহ অনুযায়ী, দুধপানরত ছেলে শিশুর পেশাবের ক্ষেত্রে নাপাকির বিধান কিছুটা সহজ, তাই শুধু পানি ছিটানো যথেষ্ট।
🔹 কিন্তু মেয়ে শিশুর পেশাব সরাসরি ধুয়ে পরিষ্কার করা ফরজ করা হয়েছে।
🔹 ফিকহবিদদের মতে, এটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নত এবং শরীয়তের সহজ বিধান।

🟢 শিশুর পেশাব নাপাক, তবে কীভাবে পবিত্র করবেন?

ইসলামে পেশাব নাপাক বলে গণ্য করা হয়, তবে নবজাতক শিশুদের ক্ষেত্রে কিছু ভিন্ন বিধান রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদিস অনুযায়ী:

🔸 ছেলে শিশুর পেশাব: যদি শিশু কেবল মাত্র মাতৃদুগ্ধ পান করে এবং অন্য কোনো খাবার খাওয়া শুরু না করে, তবে তার পেশাব হালকা নাপাক বলে গণ্য করা হয়। এক্ষেত্রে কাপড়ে লাগলে শুধু পানি ছিটিয়ে দিলেই তা পবিত্র হয়ে যাবে।

🔸 মেয়ে শিশুর পেশাব: কন্যা শিশুর পেশাব সম্পূর্ণ নাপাক বলে গণ্য হয় এবং এটি পাক করার জন্য অবশ্যই ধৌত করতে হবে।

📖 হাদিসের প্রমাণ:

হযরত আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

“ছোট ছেলে শিশুর পেশাবে পানি ছিটিয়ে দিলেই চলবে, কিন্তু ছোট মেয়ে শিশুর পেশাব ধৌত করতে হবে।”

(সহিহ ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৫২৫)


🟡 কেন ছেলে ও মেয়েশিশুর পেশাবের বিধান ভিন্ন?

অনেকে জানতে চান, কেন ছেলে ও মেয়েশিশুর পেশাবের বিধান আলাদা? এ সম্পর্কে হাদিস শরিফে ব্যাখ্যা রয়েছে।

ইমাম শাফিঈ (রহ.) বলেন, ছেলে শিশুর শরীরের গঠন এবং মাতৃদুগ্ধ থেকে সরাসরি উৎপন্ন পেশাব কম নাপাক, তাই শুধু পানি ছিটানো যথেষ্ট। অপরদিকে, মেয়েশিশুর শরীরে মায়ের দুধের সাথে অন্যান্য উপাদান যুক্ত হয়ে পেশাবের প্রকৃতিতে পরিবর্তন আনে, তাই এটি ধৌত করা জরুরি।

👉 ইমাম শাফিঈ (রহ.)-এর ব্যাখ্যা:
তিনি বলেন,

➤ "ছেলেশিশুর পেশাব মূলত মাটি ও পানি থেকে নির্গত হয়, আর মেয়েশিশুর পেশাব রক্ত ও মাংস থেকে নির্গত হয়। তাই ছেলেশিশুর পেশাব তুলনামূলক হালকা নাপাক, আর মেয়েশিশুর পেশাব অধিক নাপাক।"

👉 ফিকহের ব্যাখ্যা:
🔹 ছেলেশিশুর পেশাব হালকা নাপাক:

  • যদি সে শুধু মাতৃদুগ্ধ পান করে, তবে তার পেশাবে শুধু পানি ছিটানো যথেষ্ট।
  • এটি হালকা নাপাক হওয়ার কারণ হলো, তার খাদ্য শুধুমাত্র তরল (দুধ), যা দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়

ইসলামিক ফিকহ অনুসারে, নবজাতক ছেলের পেশাব তরল ও পাতলা হয় এবং সহজে পরিষ্কার করা যায়। তাই শুধু পানি ছিটালেই যথেষ্ট।

🔹 মেয়েশিশুর পেশাব সম্পূর্ণ নাপাক:

  • এটি গাঢ় ও ঘন হয়ে শরীর থেকে নির্গত হয়।
  • এটি সাধারণ নাপাকের মতো ধোয়া জরুরি, শুধু ছিটানো যথেষ্ট নয়।

মেয়েশিশুর পেশাব তুলনামূলকভাবে ঘন হয়, তাই সেটি সম্পূর্ণরূপে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হয়।


🔵 শিশুর বয়স অনুযায়ী পেশাবের বিধান

বয়সপেশাবের বিধান
নবজাতক থেকে ২ বছর (শুধু মাতৃদুগ্ধ পানকারী ছেলে শিশু)পানি ছিটানো যথেষ্ট
নবজাতক থেকে ২ বছর (শুধু মাতৃদুগ্ধ পানকারী মেয়ে শিশু)ধৌত করা বাধ্যতামূলক
২ বছরের বেশি বয়সী ছেলে-মেয়ে উভয় শিশুধৌত করা আবশ্যক
যে শিশু খাবার খাওয়া শুরু করেছে (দুধ ছাড়া অন্য কিছু খায়)ধৌত করা আবশ্যক

🟠 কাপড়ে বা শরীরে শিশুদের পেশাব লাগলে কী করবেন?

শিশু ছেলে হলে (শুধু দুধ পানকারী):

  • হাত দিয়ে পানি নিয়ে পেশাব লাগা স্থানে ছিটিয়ে দিন।

  • ঘষার প্রয়োজন নেই।

শিশু মেয়ে হলে (শুধু দুধ পানকারী):

  • কাপড়ের সেই অংশ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

  • ভালোভাবে ধৌত করা ছাড়া কাপড় পবিত্র হবে না।

শিশুর বয়স ২ বছর পার হলে (ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্য):

  • কাপড়ের নাপাক অংশ ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।

  • পানি চিপে পরিষ্কার হতে হবে, যাতে পেশাবের কোনো চিহ্ন না থাকে।


🔴 প্রস্রাব লেগে শুকিয়ে গেলে কী করণীয়?

অনেকে মনে করেন, কাপড়ে লাগা পেশাব শুকিয়ে গেলে তা আর নাপাক থাকে না। কিন্তু ইসলামে এর সঠিক নিয়ম হলো:

  • শুকিয়ে গেলেও নাপাকই থাকবে।

  • পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার না করা পর্যন্ত তা পাক হবে না।

  • শুকনো কাপড় পরে নামাজ পড়লে নামাজ শুদ্ধ হবে না।

📖 হাদিসের আলোকে:

“নাপাক বস্তু যদি শুকিয়ে যায়, তবে তাতে পানি প্রয়োগ করা ছাড়া তা পাক হবে না।”

(সহিহ বুখারি, হাদিস নং ২২২)


🟣 কাপড়ে বা শরীরে প্রস্রাব লেগে নামাজ হবে কি?

নামাজের জন্য পবিত্রতা অপরিহার্য। তাই কাপড় বা শরীরে যদি প্রস্রাব লেগে থাকে, তাহলে তা পরিষ্কার না করে নামাজ আদায় করা যাবে না। যদি কেউ না জানার কারণে এমন অবস্থায় নামাজ পড়ে, তবে তা পুনরায় আদায় করা উচিত।

📌 গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা:

  • নামাজের আগে নিশ্চিত করুন যে আপনার কাপড় বা শরীর সম্পূর্ণ পবিত্র।

  • সন্দেহ থাকলে, যে অংশে প্রস্রাব লেগেছে বলে মনে হয়, তা ধুয়ে ফেলাই উত্তম।

আরো পড়ুন

খুব সহজেই সন্তানের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার গুরুগত্বপূর্ণ কিছু টিপস

তুলনা নয়, প্রশংসা ও উৎসাহে গড়ে উঠুক শিশুর ভবিষ্যৎ 

বুদ্ধি বাড়াতে যেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত – জানুন ৪টি ক্ষতিকর খাবার

শিশুর পুষ্টিকর খাবার তালিকা: সুস্থ ও সুন্দর ভবিষ্যতের পথচলা

বাড়িতে যেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত – জানুন ৪টি ক্ষতিকর খাবার


উপসংহার

শিশুর পেশাব সংক্রান্ত বিধান বোঝার জন্য হাদিসের আলোকে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা রয়েছে। নবজাতক ছেলে শিশুর ক্ষেত্রে পানি ছিটানো যথেষ্ট হলেও, মেয়েশিশুর ক্ষেত্রে ধৌত করা বাধ্যতামূলক। শিশুর বয়স ২ বছর পার হলে উভয়ের পেশাব ধৌত করাই শরীয়তের বিধান। তাই ইসলামের নির্দেশনা মেনে চলাই উত্তম।

আশা করি, এই ব্লগ পোস্টটি আপনার জন্য উপকারী হয়েছে। যদি কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে কমেন্ট করে জানান! 😊

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[blogger]

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget