ছোট্ট পরীর মতো মুখ, গোলাপি গাল, কিন্তু তার সাথে সারাক্ষণ গাল বেয়ে নামছে লালার ধারা! অনেক বাবা-মায়ের মনে প্রশ্ন জাগে—এটা কি স্বাভাবিক? নাকি কোনো সমস্যা?
হ্যাঁ, একদম স্বাভাবিক! সাধারণত ৩ মাস বয়স থেকে শিশুদের মুখে লালা পড়তে শুরু করে। কারণ, প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় তাদের মুখে ৮ গুণ বেশি লালারস তৈরি হয়! কিন্তু তখনও তারা ঠোঁট বন্ধ রাখতে শেখেনি বা সবসময় গিলে নিতে পারে না, তাই লালা বাইরে এসে পড়ে।
কেন লালা বেশি বের হয়?
🔹 সবকিছু মুখে দেওয়ার চেষ্টা – শিশুরা হাতের কাছে যা পায়, তাই মুখে পুরে নেয়, এতে লালারস বেড়ে যায়।
🔹 স্বাভাবিক বৃদ্ধি – চিকিৎসকদের মতে, মুখ থেকে লালা পড়া মানেই শিশুর সঠিক বিকাশ হচ্ছে!
🔹 দাঁত ওঠা: সাধারণত ছয় মাস বয়স থেকে দাঁত ওঠার সময় শিশুদের লালা বেশি বের হয়।
🔹 ঠান্ডা বা অ্যালার্জি: নাক বন্ধ থাকলে শিশুরা মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়, এতে লালা গড়িয়ে পড়ে।
🔹 স্নায়ুর সমস্যা: ফেসিয়াল নার্ভ, সেরিব্রাল পালসি, বা ট্রাইজেমিনাল নার্ভের সমস্যার কারণে অতিরিক্ত লালা হতে পারে।
🔹 মুখের সংক্রমণ: টনসিল, সাইনাস ইনফেকশন, বা মুখের ক্ষত থেকেও লালা বেশি হতে পারে।
🔹 খাবারের প্রভাব: টকজাতীয় বা মশলাদার খাবার খেলে লালা বেড়ে যেতে পারে।
🔹 অস্বাভাবিক জিব বা ঠোঁট: ঠোঁটের গঠনগত সমস্যা (যেমন ঠোঁট ও তালুকাটা) বা মুখ ঠিকমতো বন্ধ না হলে লালা পড়তে পারে।
🔹 বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু: কিছু বিশেষ শিশুর মধ্যে অতিরিক্ত লালা নিঃসরণের প্রবণতা দেখা যায়।
কবে কমবে?
সাধারণত ২ বছর বয়সের মধ্যে লালা পড়া ধীরে ধীরে কমে আসে। তবে যদি তার পরেও অতিরিক্ত লালা পড়ে, কথা বলতে বা খেতে সমস্যা হয়, তাহলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
তাই লালা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই! বরং এটাকে শিশুর বেড়ে ওঠার একটা মিষ্টি ধাপ হিসেবে দেখলেই ভালো। 😊💖
সমাধান কী?
✅ মূল কারণ খুঁজে বের করা – প্রথমেই ডেন্টাল ও শিশু চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
✅ খাদ্য নিয়ন্ত্রণ – অতিরিক্ত লালা নিঃসরণ হয় এমন খাবার (যেমন টকজাতীয় বা লোভনীয় খাবার) এড়িয়ে চলা ভালো।
✅ সঠিক অবস্থান বজায় রাখা – শিশুকে এমনভাবে শুইয়ে বা বসিয়ে রাখুন, যাতে লালা কম পড়ে।
✅ মুখের যত্ন নিশ্চিত করা:
🔸 নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করানো (নরম ব্রাশ ও ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করা)।
🔸 মুখের চারপাশ পরিষ্কার ও শুকনো রাখা, যাতে সংক্রমণ না হয়।
✅ খারাপ অভ্যাস দূর করা:
🔸 চুষনি বা আঙুল চোষার অভ্যাস কমানো।
🔸 অতিরিক্ত টিভি/ইন্টারনেট দেখা নিয়ন্ত্রণ করা।
✅ পানি পান করানো – শিশুকে বারবার স্বল্প পরিমাণে পানি পান করাতে হবে।
✅ প্রাকৃতিক উপায়:
🔸 আদা চিবানো বা পেঁপের জুস খাওয়ানো লালার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
✅ থেরাপি ও চিকিৎসা:
🔸 স্পিচ থেরাপি এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শে ওষুধ দেওয়া যেতে পারে।
লালা নিঃসরণের ফলে শিশুর কোনো সমস্যা হয় কি?
✅ গালের চারপাশ ভিজে থাকার কারণে লালচে ভাব বা অ্যালার্জি হওয়া
✅ অতিরিক্ত লালা ঢুকে মাঝে মাঝে কাশি বা সামান্য শ্বাসকষ্ট হওয়া
✅ সামাজিকভাবে বিব্রত হওয়া
✅ কথা বলার সময় বা খাবার খাওয়ার সময় লালা বেরিয়ে আসা
✅ মুখ ও কাপড়ে দুর্গন্ধ হওয়া
✅ লালার কারণে চামড়ায় সংক্রমণ বা প্রদাহ হওয়া
✅ শ্বাসতন্ত্রে লালা ঢুকে কাশি বা নিউমোনিয়ার ঝুঁকি
লালা পড়ে বুক ভিজে গেলে গলায় আলাদা একটা নরম কাপর বেদে দেয়া। শরীরে পড়ে ভিজে গেলে পোষাক পরিবর্তন করে দেয়া। তবে এসব সমস্যা খুব সাধারণ এবং সাধারণ পরিচর্যার মাধ্যমে সহজেই এড়ানো যায়।
লালা নিঃসরণ কেন শিশুর সঠিক বিকাশের ইঙ্গিত দেয়?
🔹 পরিপাকতন্ত্রের প্রস্তুতি: শিশুর মুখে লালা উৎপন্ন হওয়া তার হজম প্রক্রিয়া ও খাদ্য গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। লালায় থাকা এনজাইম (যেমন অ্যামাইলেজ) খাবার হজম করতে সহায়তা করে।
🔹 সংক্রমণ প্রতিরোধ: লালারস প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান সমৃদ্ধ, যা শিশুর মুখের ভেতর ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এটি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
🔹 দাঁত ওঠার প্রস্তুতি: সাধারণত ছয় মাস বয়সের পর শিশুর দাঁত উঠতে শুরু করে। তখন মাড়ির নিচে চাপ পড়ার কারণে লালারসের নিঃসরণ বাড়ে, যা দাঁত ওঠার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ।
🔹 ইন্দ্রিয় বিকাশ: শিশু যখন হাত, খেলনা বা আশপাশের জিনিস মুখে নেয়, তখন এটি তার স্পর্শ ও স্বাদ গ্রহণের অনুভূতি গড়ে তোলার অংশ। লালা নিঃসরণের মাধ্যমে শিশু তার পরিবেশ সম্পর্কে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করে।
🔹 গিলতে শেখার চর্চা: জন্মের পর থেকেই শিশু ধীরে ধীরে গিলতে শেখার প্রক্রিয়া শুরু করে। প্রথম দিকে এটি পুরোপুরি রপ্ত না থাকায় লালা মুখ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। কিন্তু এটি পরবর্তীতে খাবার খাওয়ার দক্ষতা উন্নত করে।
আরো জেনে নিন
নবজাতকের জিহ্বায় ঘা: কারণ, প্রতিরোধ, দ্রুত নিরাময় ও চিকিৎসার সম্পূর্ণ গাইড
ছোট্ট পায়ে বড় জগৎ: শেখা, বন্ধুত্ব ও যত্নে শিশুর আনন্দময় বিকাশ
কুরআনের দৃষ্টিতে শিশুর মায়ের দুধ পান করার সময়সীমা: বিশেষজ্ঞদের মতামত
শিশুর বিকাশের সোনালি সময়: শারীরিক দক্ষতা, সৃজনশীলতা ও বন্ধুত্বের পথচলা ও আনন্দময় যাত্রা
শিশুর বিকাশে পরিবার ও সমাজের প্রভাব: কীভাবে গড়ে ওঠে ভবিষ্যৎ?
শিশুর কৃমি: লক্ষণ, কারণ ও প্রতিরোধের উপায়
শিশুর দেরিতে কথা বলা নিয়ে দুশ্চিন্তা? জেনে নিন কারণ, করণীয় ও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
রাতে বা দিনে শিশুরা অতিরিক্ত কান্না করলে যে সুরা পাঠ করবেন
কখন লালা নিঃসরণ নিয়ে চিন্তিত হওয়া উচিত?
👉 দুই বছরের পরেও যদি লালা পড়া বেশি হয়
👉 শিশু খাবার গিলতে না পারে বা খাওয়ার সময় লালা বেশি বের হয়
👉 লালার কারণে ত্বকে ফুসকুড়ি, সংক্রমণ বা প্রদাহ দেখা দেয়
👉 শ্বাস নিতে অসুবিধা হয় বা ঘুমের মধ্যে নাক ডাকে
এমন পরিস্থিতিতে শিশু বিশেষজ্ঞ বা শিশু দাঁতের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
শেষ কথা
শিশুর মুখ থেকে লালা পড়া সাধারণত তার স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধিরই একটি অংশ। এটি তার হজমশক্তি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, দাঁতের বৃদ্ধি ও কথা বলার ক্ষমতা বিকাশে সহায়তা করে। তাই অল্প লালা পড়া নিয়ে চিন্তা না করে বরং এটি শিশুর বেড়ে ওঠার মিষ্টি একটা ধাপ হিসেবে উপভোগ করুন! 😊💖
আরো ইনফো পড়ুন
🔹 শিশুর বয়স অনুযায়ী প্রসাবের বিধান: হাদিসের আলোকে জানুন!
নবজাতকের নাভির যত্ন: সব বাবা-মায়ের জানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য! 💡👣
শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে অসাধারণ কিছু উপায়!
শীতে শিশুর যত্ন: চিকিৎসকদের পরামর্শে সুস্থ, উষ্ণ ও কোমল ত্বক নিশ্চিত করুন! ❄️👶
🌸 গরমে নবজাতক শিশুর যত্ন ও পরিচর্যা: মমতার ছোঁয়ায় সুরক্ষা
ত্বকের সমস্যা? ঘরোয়া উপায়ে সমাধান করুন
🌟 মোবাইল আসক্তি থেকে মুক্তি: আপনার সন্তানের জন্য একটি সুস্থ জীবন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.