রমজান মাসে স্বামী-স্ত্রীর যৌন সম্পর্ক স্থাপনের নিয়ম ইসলামে স্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে। অনেকেই মনে করেন, পুরো রমজান মাসে যৌন মিলন নিষিদ্ধ, কিন্তু আসলে বিষয়টি এমন নয়। এখানে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো—
১. রোজা থাকা অবস্থায় যৌন সম্পর্ক করা যাবে কি?
না, রোজার সময় (ফজর থেকে মাগরিব পর্যন্ত) স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হারাম এবং এতে রোজা ভেঙে যাবে।
যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে রোজার সময় সহবাস করে, তাহলে করণীয় কী?
- এর ফলে শুধু রোজা ভেঙে যাবে না, বরং কাফফারাও আদায় করতে হবে।
- কাফফারা হলো:
১. একটানা ৬০ দিন রোজা রাখা, অথবা
২. ৬০ জন গরিবকে খাওয়ানো (যদি শারীরিকভাবে ৬০ দিন রোজা রাখা সম্ভব না হয়)। - রোজা ভেঙে গেলে সেই দিনের রোজার কাজাও করতে হবে।
২. রোজার সময় চুম্বন, স্পর্শ বা ঘনিষ্ঠতা করা যাবে কি?
- ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা প্রকাশের অনুমতি আছে, তবে যদি তা যৌন উত্তেজনার কারণ হয় এবং বীর্যপাত হয়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে।
- নবী মুহাম্মদ (সা.) বৃদ্ধদের জন্য হালকা চুম্বন বা আলিঙ্গনের অনুমতি দিয়েছেন, তবে যারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না, তাদের জন্য এটি পরিহার করাই উত্তম।
৩. ইফতারের পর কি যৌন মিলন করা যাবে?
হ্যাঁ, মাগরিবের পর থেকে সেহরির আগ পর্যন্ত (রাতের বেলায়) স্বামী-স্ত্রীর বৈধ যৌন সম্পর্কের অনুমতি আছে।
-
কুরআনে বলা হয়েছে:
"রমজানের রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস করা হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্য পোশাকস্বরূপ এবং তোমরা তাদের জন্য পোশাকস্বরূপ..." (সুরা আল-বাকারা: ১৮৭)
-
অর্থাৎ, রাতে রোজার কোনো বিধিনিষেধ নেই, স্বামী-স্ত্রী চাইলে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতে এবং মিলিত হতে পারেন।
৪. যৌন মিলনের পর সাহরির আগে গোসল না করলে কি রোজা হবে না?
- যদি রাতে সহবাস করেন বা স্বপ্নদোষ হয়, তবে সেহরির আগে গোসল না করলেও রোজা রাখা যাবে।
- তবে ফজরের নামাজের আগে অবশ্যই গোসল করতে হবে, কারণ পবিত্রতা ছাড়া নামাজ আদায় করা যাবে না।
সংক্ষেপে মূল কথা:
✅ রোজার সময় (সুবহে সাদিক থেকে মাগরিব পর্যন্ত) যৌন সম্পর্ক সম্পূর্ণ হারাম এবং রোজা ভেঙে যাবে।
✅ রোজার পর (মাগরিব থেকে সুবহে সাদিকের আগে) স্বামী-স্ত্রীর যৌন সম্পর্ক হালাল।
✅ চুম্বন, আলিঙ্গন করা যায়, তবে যদি উত্তেজনার ফলে বীর্যপাত হয়, তাহলে রোজা নষ্ট হবে।
✅ সুবহে সাদিকের আগে গোসল করতে ভুলে গেলেও রোজা রাখা যাবে, তবে নামাজের জন্য অবশ্যই পবিত্রতা অর্জন করতে হবে।
রমজান হলো আত্মসংযমের মাস, তাই রোজার সময় এসব বিষয় থেকে বিরত থাকা উচিত। তবে রাতের বেলায় স্বামী-স্ত্রী স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবন যাপন করতে পারেন। 😊
আরো পড়ুন
কারা রোজা রাখবে?
ইসলামে রোজা ফরজ (আবশ্যিক) কাদের জন্য?
যারা নিম্নলিখিত শর্ত পূরণ করে, তাদের জন্য রোজা রাখা বাধ্যতামূলক—
✅ মুসলিম হতে হবে – অমুসলিমদের জন্য রোজার কোনো বিধান নেই।
✅ প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে – সাধারণত ১২-১৫ বছর বয়সের মধ্যে যখন বয়ঃসন্ধি হয়, তখনই রোজা ফরজ হয়।
✅ মানসিকভাবে সুস্থ হতে হবে – মানসিক ভারসাম্যহীন বা অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য রোজা বাধ্যতামূলক নয়।
✅ শারীরিকভাবে সক্ষম হতে হবে – যারা গুরুতর অসুস্থ বা এত দুর্বল যে রোজা রাখলে আরও ক্ষতি হতে পারে, তাদের জন্য রোজার বাধ্যবাধকতা নেই।
✅ মুসাফির (ভ্রমণকারী) না হতে হবে – যারা শারীরিকভাবে কষ্টকর দীর্ঘ সফরে আছেন, তারা চাইলে রোজা না রেখে পরবর্তী সময়ে কাজা করতে পারেন।
✅ নারীদের ক্ষেত্রে বিশেষ অবস্থায় না থাকতে হবে – মাসিক চলাকালীন, অন্তঃসত্ত্বা বা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানো নারীরা রোজা রাখতে বাধ্য নন, তবে পরবর্তী সময়ে কাজা করতে হবে।
শিশুরা রোজা রাখবে কি?
- ইসলামে শিশুদের জন্য রোজা বাধ্যতামূলক নয়।
- তবে ইসলামি শিক্ষায় শিশুদের ছোটবেলা থেকে রোজার প্রতি আগ্রহী করে তোলার অনুমতি আছে।
- অনেক শিশু আনন্দের জন্য রোজা রাখে, বিশেষ করে আধা-রোজা বা ছোট রোজা (নিষ্পাপ রোজা) যা দুপুর পর্যন্ত রাখা হয়।
📌 হাদিস অনুযায়ী:
নামাজের ক্ষেত্রে শিশুদের সাত বছর বয়স থেকে শেখানো উচিত এবং ১০ বছর বয়স থেকে নিয়মিত করতে বলা হয়েছে।
কিন্তু রোজার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো বয়সের বাধ্যবাধকতা নেই, তবে সাবালকত্বে পৌঁছালে রোজা রাখা ফরজ হয়ে যায়।
যারা রোজা রাখতে পারবে না বা না রাখার অনুমতি আছে:
❌ অসুস্থ ব্যক্তি – গুরুতর অসুস্থ হলে রোজা রাখা বাধ্যতামূলক নয়, তবে সুস্থ হলে কাজা করতে হবে।
❌ মাসিক, সন্তান জন্মদান বা বুকের দুধ খাওয়ানো অবস্থায় নারীরা – পরে কাজা করা লাগবে।
❌ বৃদ্ধ বা স্থায়ীভাবে অসুস্থ ব্যক্তি – কাজা সম্ভব না হলে ফিদিয়া দিতে হবে (প্রতিদিন একজন দরিদ্রকে খাওয়ানো)।
❌ দীর্ঘ সফরে থাকা ব্যক্তি (মুসাফির) – পরে কাজা করতে হবে।
সংক্ষেপে:
✔ প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ, মানসিকভাবে সক্ষম মুসলিমদের জন্য রোজা ফরজ।
✔ শিশুদের জন্য রোজা আবশ্যিক নয়, তবে উৎসাহ দেওয়া যেতে পারে।
✔ অসুস্থ, মুসাফির, অন্তঃসত্ত্বা ও দুগ্ধদানকারী নারীদের জন্য রোজার শিথিলতা আছে।
রমজান আত্মসংযমের মাস, তাই ইসলাম কোনো অনৈতিক কষ্ট দেয় না—যারা রোজা রাখতে অক্ষম, তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রেখেছে। 😊
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন