শিশুর সুস্থ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সময়মতো টিকা দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জন্মের পর থেকেই শিশুকে বিভিন্ন সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা করতে নির্দিষ্ট সময়সূচী অনুযায়ী টিকা দেওয়া হয়।
আসুন, শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় টিকা ও তাদের গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।
শিশুদের মোট কয়টি টিকা দেওয়া হয়?
০-১৮ মাস বয়সের মধ্যে শিশুদের ৯টি মারাত্মক রোগের বিরুদ্ধে টিকা দেওয়া হয়, যা তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। সরকারি টিকাদান কর্মসূচির অধীনে শিশুদের ৬টি প্রধান টিকা দেওয়া হয়, যা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে। এছাড়া, বেসরকারিভাবে কিছু অতিরিক্ত টিকা দেওয়া হয়, যা শিশুর সুস্থতার জন্য কার্যকর হতে পারে।
✅ সরকারি টিকাদান কর্মসূচির আওতায় ৬টি টিকা ও সেগুলোর গুরুত্ব:
টিকার নাম | কোন রোগ প্রতিরোধ করে? | প্রথম ডোজের সময় | মোট ডোজ |
---|---|---|---|
বিসিজি (BCG) | যক্ষ্মা (টিবি) | জন্মের পর | ১ ডোজ |
ওরাল পোলিও (OPV) | পোলিও | জন্ম, ৬, ১০, ১৪ সপ্তাহ ও ৯ মাসে | ৫ ডোজ |
হেপাটাইটিস বি (Hep-B) | হেপাটাইটিস বি | জন্মের পর (২৪ ঘণ্টার মধ্যে) | ১ ডোজ |
পেন্টাভ্যালেন্ট (DPT-HepB-Hib) | ডিপথেরিয়া, পারটুসিস, টিটেনাস, হেপাটাইটিস বি, হিব | ৬, ১০, ১৪ সপ্তাহ | ৩ ডোজ |
নিউমোকোকাল (PCV) | নিউমোকোকাল রোগ (নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিস) | ৬, ১০, ১৪ সপ্তাহ | ৩ ডোজ |
হাম-রুবেলা (MR) | হাম ও রুবেলা | ৯ মাস ও ১৫ মাস | ২ ডোজ |
✅ অতিরিক্ত বেসরকারি টিকা (ঐচ্ছিক কিন্তু কার্যকর)
সরকারি টিকাগুলোর পাশাপাশি বেসরকারিভাবে কিছু অতিরিক্ত টিকা দেওয়া হয়, যা শিশুদের আরও ভালো সুরক্ষা দিতে পারে।
টিকার নাম | কোন রোগ প্রতিরোধ করে? | ডোজ ও সময় |
---|---|---|
রোটা (Rotavirus) | ডায়রিয়া | ৬ ও ১০ সপ্তাহে (২ ডোজ) |
ইনফ্লুয়েঞ্জা (Flu Vaccine) | ইনফ্লুয়েঞ্জা (ফ্লু) | ৬ মাস থেকে প্রতি বছর |
ভেরিসেলা (Varicella) | জলবসন্ত (Chickenpox) | ১২-১৮ মাসে ১ ডোজ |
হেপাটাইটিস এ (Hep-A) | হেপাটাইটিস এ | ১২ মাস ও ১৮ মাস (২ ডোজ) |
জাপানিজ এনসেফালাইটিস (JE) | মস্তিষ্কের প্রদাহ | ১২ মাসে ১ ডোজ |
🗓 শিশুর সম্পূর্ণ টিকা সময়সূচি (০-১৮ মাসে)
শিশুর বয়স | দেওয়া হবে |
---|---|
জন্মের পর | BCG, OPV-0, Hep-B |
৬ সপ্তাহ | OPV-1, পেন্টাভ্যালেন্ট-1, PCV-1, রোটা-1 |
১০ সপ্তাহ | OPV-2, পেন্টাভ্যালেন্ট-2, PCV-2, রোটা-2 |
১৪ সপ্তাহ | OPV-3, পেন্টাভ্যালেন্ট-3, PCV-3 |
৯ মাস | হাম-রুবেলা (MR)-1, OPV Booster |
১৫ মাস | হাম-রুবেলা (MR)-2 |
🌟 কেন শিশুর টিকাদান গুরুত্বপূর্ণ?
✅ গুরুতর সংক্রমণ ও মহামারি প্রতিরোধ করে
✅ শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
✅ দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেয়
✅ সমাজের অন্যান্য শিশুদেরও সুরক্ষিত রাখে (হার্ড ইমিউনিটি)
📢 পরামর্শ:
- সময়মতো শিশুর টিকা দিন এবং টিকা কার্ড সংরক্ষণ করুন।
- শিশু অসুস্থ থাকলেও টিকা দেওয়া যেতে পারে (ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে)।
- কোনো টিকা মিস হয়ে গেলে, যত দ্রুত সম্ভব পূরণ করে নেওয়া উচিত।
টিটেনাস (TT) টিকার সময়সূচী ও ডোজ
টিটেনাস থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে শিশুদের ১০ বছর এবং ১৫ বছর বয়সে ১টি করে টিকা দেওয়া হয়। এই টিকা শিশুকে টিটেনাসজনিত সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে, যা একটি গুরুতর ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ।
টিটেনাস (TT) টিকা
টিটেনাস একটি গুরুতর ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ যা শরীরে কাটা, ছেঁড়া বা ক্ষতস্থানের মাধ্যমে প্রবেশ করতে পারে। এটি প্রতিরোধের জন্য TT (টিটেনাস টক্সয়েড) টিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
✅ শিশুদের জন্য টিটেনাস (TT) টিকা:
শিশুদের সাধারণত ১০ বছর এবং ১৫ বছর বয়সে ১টি করে TT টিকা দেওয়া হয়।
বয়স | টিকার নাম | ডোজ |
---|---|---|
১০ বছর | টিটেনাস টক্সয়েড (TT) | ১ম ডোজ |
১৫ বছর | টিটেনাস টক্সয়েড (TT) | ২য় ডোজ |
➡️ এই দুটি ডোজ নেওয়ার মাধ্যমে টিটেনাসের দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা নিশ্চিত হয়।
✅ পূর্ণ সুরক্ষার জন্য ৫ ডোজের TT কোর্স (যদি আগে না নিয়ে থাকে):
যেসব শিশু বা ব্যক্তি আগে TT টিকার সম্পূর্ণ কোর্স নেয়নি, তাদের ৫টি ডোজ নেওয়া উচিত।
ডোজ | কখন দিতে হবে? |
---|---|
TT1 | প্রথম সুযোগে (যত দ্রুত সম্ভব) |
TT2 | TT1 দেওয়ার ৪ সপ্তাহ পর |
TT3 | TT2 দেওয়ার ৬ মাস পর |
TT4 | TT3 দেওয়ার ১ বছর পর |
TT5 | TT4 দেওয়ার ১ বছর পর |
➡️ এই ৫টি ডোজ নিলে ১৫ বছর পর্যন্ত টিটেনাসের সুরক্ষা পাওয়া যায়।
✅ গর্ভবতী মায়ের জন্য টিটেনাস টিকা:
যেহেতু নবজাতকরা সরাসরি TT টিকা পায় না, তাই গর্ভবতী মাকে টিটেনাসের ডোজ দেওয়া হয়, যা শিশুকে জন্মের পর টিটেনাস থেকে সুরক্ষা দেয়।
গর্ভাবস্থার সময় | টিকার নাম | ডোজ |
---|---|---|
প্রথম ডোজ (TT1) | গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে | ১ ডোজ |
দ্বিতীয় ডোজ (TT2) | TT1 দেওয়ার ৪ সপ্তাহ পর | ১ ডোজ |
TT Booster | যদি আগে TT কোর্স নেওয়া থাকে, তাহলে শুধু ১টি বুস্টার ডোজ |
➡️ গর্ভবতী মাকে টিটেনাস টিকা দিলে নবজাতকও সুরক্ষিত থাকে!
🌟 টিটেনাস টিকা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
✅ টিটেনাসজনিত মারাত্মক সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে
✅ দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা দেয়
✅ নবজাতকের জন্য রোগ প্রতিরোধ তৈরি করে (গর্ভবতী মায়ের ক্ষেত্রে)
✅ কাটা-ছেঁড়া, দুর্ঘটনা বা অস্ত্রোপচারের পর সংক্রমণ প্রতিরোধ করে
📢 পরামর্শ:
✔ সময়মতো টিটেনাস টিকা নিন।
✔ টিকা নেওয়ার পর টিকা কার্ড সংরক্ষণ করুন।
✔ কোনো ডোজ মিস হলে, যত দ্রুত সম্ভব পূরণ করে নিন।
কেন শিশুর টিকাদান জরুরি?
✔️ শিশুকে মারাত্মক সংক্রামক রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখে।
✔️ কমিউনিটি পর্যায়ে রোগের বিস্তার কমায়।
✔️ শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে।
✔️ ভবিষ্যতে জটিল স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি হ্রাস করে।
✔️ শিশুর সুস্থ ও স্বাভাবিক বিকাশ নিশ্চিত করে।
শেষ কথা
সঠিক সময়ে সঠিক টিকা নিশ্চিত করা শিশুর সুস্থ জীবনের প্রথম পদক্ষেপ। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়সূচীতে শিশুর সব টিকা দেওয়া উচিত। মনে রাখবেন, টিকা দিন, শিশুর ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখুন!
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন